ভূয়া রিক্রুটিং এজিন্সীর মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎকারী ২প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব
রাজধানীর বারিধারা থেকে অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির নাম ব্যবহার করে ভূয়া রিক্রুটিং এজেন্সি অফিস খুলে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগে প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ ০২ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। প্রবাসে বাং
রাজধানীর বারিধারা থেকে অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির নাম ব্যবহার করে ভূয়া রিক্রুটিং এজেন্সি অফিস খুলে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগে প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ ০২ জন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
প্রবাসে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর স্বার্থান্বেষী সংঘবদ্ধ চক্র বিদেশে কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষদের প্রতারিত করছে। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী র্যাবের নিকট এতদ্সংক্রান্তে অভিযোগ দেয়। ফলশ্রুতিতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল ঢাকার ভাটারা থানাধীন বারিধারায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের মূল হোতা (১) মোঃ সুজন শেখ (৩৯), পিতা- মোঃ আবুল হাশেম, নান্দাইল, ময়মনসিংহ, (২) মোঃ আমিনুল ইসলাম রনি (৪৮), পিতা- মোঃ আবু কালাম, কালিগঞ্জ, গাজীপুর’কে গ্রেফতার করা হয়। এসময় ধৃত আসামীদের নিকট হতে ১৩৮টি পাসপোর্ট, ০৩টি মোবাইল ফোন, নগদ ৫০,০০০/- টাকা এবং বিভিন্ন ধরনের নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা তাদের প্রতারণা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রদান করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। গ্রেফতারকৃত সুজন শেখ উক্ত চক্রের মূল হোতা এবং গ্রেফতারকৃত অপর সদস্য আমিনুল ইসলাম তার অন্যতম সহযোগী। তারা বিগত ২ বছর যাবত এহেন প্রতারণার সাথে জড়িত বলে জানায়। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ১২-১৫ জন। যারা রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া, ময়মনসিহং, মাগুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। চক্রটি বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রায় তিন শতাধিক মানুষকে প্রতারিত করেছে। চক্রের সদস্যরা সাধারণত গার্মেন্টস, কারখানা, ড্রাইভার, সিএনজি চালক, গৃহকর্মী ইত্যাদি শ্রেণীর কর্মজীবীদের টার্গেট করত।
গ্রেফতারকৃতরা সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষদের টার্গেট করত। তাদেরকে প্রবাসে বর্তমান বেতনের ২/৩ গুন বেতনের আশ্বাস দিত। এছাড়া স্বল্প খরচে ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ১৫ দিনের মধ্যে বিদেশে প্রেরণের প্রলোভন দেখাত। এই চক্রটি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে দেশ ভেদে ২.৫-৩.৫ লক্ষ টাকা খরচ বলে উল্লেখ করত। তন্মধ্যে দেশ ভেদে প্রাথমিক পর্যায়ে ১-২ লক্ষ টাকা ধার্য করত। বাকী অর্থ ব্যাংক লোনের মাধ্যমে ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিত। তারা উক্ত ১-২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করত। ব্যাংকের লোনের ব্যবস্থা পুরোটাই মিথ্যা বানোয়াট ও ভ‚য়া। বিদেশে দ্বিগুন/তিনগুন বেতন, অন্য দিকে স্বল্প সময়ে কম খরচে যাওয়া যাবে, এতে স্বল্প আয়ের মানুষরা সহজেই প্রলুব্ধ হত। এই স্বল্প আয়ের মানুষেরা প্রাথমিকভাবে ২-১ লক্ষ টাকা একটু কষ্ট করেই যোগাড় করতে পারত। এভাবে তারা নিরীহ সাধারণ মানুষ হতে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
চক্রটি সাবলেটে বিভিন্ন জায়গায় অফিস ভাড়া নিত। ফলে অফিস ভাড়া কম হত এবং সহজেই অফিস পরিবর্তন করতে পারত। তারা প্রবাসী কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়/বায়ারের ওয়েব সাইট দেখে বিভিন্ন অনুমোদিত রিক্রুটিং কোম্পানীর নাম ব্যবহার করত। উক্ত রিক্রুটিং কোম্পানীর নামে ভিজিডিং কার্ড, স্টাম্প ও অন্যান্য নথিপত্র বিদেশে গমন ইচ্ছুকদের প্রদর্শন করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করত।
প্রতারণার কৌশল হিসেবে তারা ভূয়া টিকেট, ভিসা, ভ্যাকসিন কার্ড, বিএমইটি কার্ড তৈরী করে গ্রাহকদের প্রতারিত করত। গ্রাহকদের তারা জানাত তাদের অটো সিস্টেম পদ্ধতিতে পাসপোর্ট/এনআইডি থেকে অটো ফিংগার প্রিন্টের মাধ্যমে ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য কার্ড তৈরী করা হয়। ফলে বিদেশে গমনের সময় কখনোই সমস্যায় পড়তে হবে না।
গ্রাহকদের ১৫ দিন বিদেশে প্রেরণের প্রলোভনে আকৃষ্ট করে পরে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখিয়ে দীর্ঘ সুত্রিতা করা হত। তাদেরকে বলা হত ব্যাংক ঋণ নেওয়া সমস্যা হচ্ছে। যেহেতু গ্রাহকরা ইতোমধ্যে লক্ষাধিক টাকা দিয়েছে তখন তারা বাকী অর্থ ধীরে ধীরে প্রদান করত। কারণ স্বল্প আয়ের এই মানুষদের অতিদ্রুত অবশিষ্ট ২/৩ লক্ষ টাকা যোগাড় করা কষ্টকর। ফলে গ্রাহকরা চাপ প্রয়োগ করলে তারা অবশিষ্ট অর্থ পরিশোধের জন্য বলত। ক্ষেত্র বিশেষে তারা বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি দেখাত। যে সমস্ত গ্রাহক পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করত তাদেরকে ২/১ গ্রুপে ভ‚য়া ভিসা,টিকিটসহ এয়ারপোর্ট এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হত। সাথে সাথে ঐ অফিস পরিবর্তন করে ফেলত বলে গ্রেফতারকৃতরা জানায়।
গ্রেফতারকৃতরা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে কোন কোন গ্রাহককে অন্য এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে প্রেরণ করত। কিন্তু যেহেতু তাদের নিকট যাত্রার পূর্বে কখনোই কোন কাগজপত্র দেওয়া হতো না। অন্যদিকে গ্রাহকরা স্বল্প শিক্ষিত হওয়ায় তারা তা বুঝতে পারতো না। তারা কৌশলে এ সমস্ত গ্রাহকদের মাধ্যমে বা নাম ব্যবহার করে প্রচারণা করত।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সুজন বিগত ১৫ বছর গুলশান, বনানী, মালিবাগ, কাকরাইলে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সিতে চাকুরী ও দালালি করেছে। বর্ণিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সে প্রতারণার অভিনব এই কৌশল রপ্ত করে। অন্যদিকে গ্রেফতারকৃত আমিনুল ইসলাম ২০০১-২০১৫ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে অবস্থান করত। তার প্রবাসে গমনাগমন ও জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলশ্রুতিতে তাদের কথাবার্তায় গ্রাহকরা আকৃষ্ট হত এবং পরবর্তীতে প্রতারিত হত।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।